ঢাকা ০৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউজ ডেস্ক

‘কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের করা অভিযোগ সঠিক নয়’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩২৫ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে ‘হেফাজতের নামে আটক’ থাকা অবস্থায় জোর করে মিথ্যা বিবৃতি নেওয়ার অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক যে বিবৃতি দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মহা. আশরাফুজ্জামান। 

তিনি বলেন, তারা যেসব অভিযোগ নতুন করে বিবৃতিতে উত্থাপন করেছেন তা সঠিক নয়, তারা ৩২ ঘণ্টা অনশনে থাকার বিষয়টিও সঠিক নয়। ডিবি পুলিশ মূলত তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই হেফাজতে নিয়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর নিরাপদ মনে করেই পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। জোর-জবরদস্তি করে কোনও কিছুই করা হয়নি।

শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ দিন সন্ধ্যায় তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকালে বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার নামে ছয় সমন্বয়ককে সাত দিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও মূলত আমাদের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।

যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে, তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের খুনের বিচার চাই।

dhakapost

আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারা দেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।

খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে এলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন। অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবি প্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়।

আমাদের পয়লা আগস্ট দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাত দিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সঙ্গে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের এমন অভিযোগ সম্পর্কে ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব নেওয়া অতিরিক্ত কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক কথায় যদি বলি তারা (ছয় সমন্বয়ক) বিবৃতিতে যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা সঠিক নয়।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আপনারা (গণমাধ্যম) তো তাদের সামনাসামনি দেখেননি। ৩২/৩৬ ঘণ্টা অনশনে থাকলে যে কাউকে দেখলেই বোঝা যাবে। তাদের এ অভিযোগ সঠিক না।

ডিবি হেফাজতে থাকা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, আদালতে উষ্মা প্রকাশ করেছে। ডিবি পুলিশের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমরা যে কাজটা করি সেটার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটা আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট। যেহেতু তারা বাইরে থাকা অনিরাপদ মনে করেছে, তখন আমরা তাদের হেফাজতে রেখেছি। তারপর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক মনে হয়েছে, পরিবার ও শিক্ষকরা যখন চেয়েছেন তখন তাদের আমরা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ তারা নিরাপদ মনে করেই গেছে।

dhakapost

আমরা কিন্তু এমনি এমনি তাদের ছাড়িনি, সব প্রক্রিয়া মেনেই তাদের ছাড়া হয়েছে উল্লেখ করে আশরাফুজ্জামান বলেন, যখন তাদের ছাড়ি তখন ম্যাজিস্ট্রেট  উপস্থিতি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছিলেন, সঙ্গে ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের (ছয় সমন্বয়ক) স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

নিউজ ডেস্ক

‘কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের করা অভিযোগ সঠিক নয়’

আপডেট সময় : ১২:৫৬:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে ‘হেফাজতের নামে আটক’ থাকা অবস্থায় জোর করে মিথ্যা বিবৃতি নেওয়ার অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক যে বিবৃতি দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মহা. আশরাফুজ্জামান। 

তিনি বলেন, তারা যেসব অভিযোগ নতুন করে বিবৃতিতে উত্থাপন করেছেন তা সঠিক নয়, তারা ৩২ ঘণ্টা অনশনে থাকার বিষয়টিও সঠিক নয়। ডিবি পুলিশ মূলত তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই হেফাজতে নিয়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর নিরাপদ মনে করেই পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। জোর-জবরদস্তি করে কোনও কিছুই করা হয়নি।

শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ দিন সন্ধ্যায় তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকালে বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার নামে ছয় সমন্বয়ককে সাত দিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও মূলত আমাদের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।

যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে, তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের খুনের বিচার চাই।

dhakapost

আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারা দেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।

খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে এলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন। অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবি প্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়।

আমাদের পয়লা আগস্ট দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাত দিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সঙ্গে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের এমন অভিযোগ সম্পর্কে ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব নেওয়া অতিরিক্ত কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক কথায় যদি বলি তারা (ছয় সমন্বয়ক) বিবৃতিতে যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা সঠিক নয়।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আপনারা (গণমাধ্যম) তো তাদের সামনাসামনি দেখেননি। ৩২/৩৬ ঘণ্টা অনশনে থাকলে যে কাউকে দেখলেই বোঝা যাবে। তাদের এ অভিযোগ সঠিক না।

ডিবি হেফাজতে থাকা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, আদালতে উষ্মা প্রকাশ করেছে। ডিবি পুলিশের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমরা যে কাজটা করি সেটার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটা আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট। যেহেতু তারা বাইরে থাকা অনিরাপদ মনে করেছে, তখন আমরা তাদের হেফাজতে রেখেছি। তারপর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক মনে হয়েছে, পরিবার ও শিক্ষকরা যখন চেয়েছেন তখন তাদের আমরা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ তারা নিরাপদ মনে করেই গেছে।

dhakapost

আমরা কিন্তু এমনি এমনি তাদের ছাড়িনি, সব প্রক্রিয়া মেনেই তাদের ছাড়া হয়েছে উল্লেখ করে আশরাফুজ্জামান বলেন, যখন তাদের ছাড়ি তখন ম্যাজিস্ট্রেট  উপস্থিতি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছিলেন, সঙ্গে ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের (ছয় সমন্বয়ক) স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করেছেন।