ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুরুদাসপুরে হাজেরা ক্লিনিকে চিকিৎসার অভাবে নবজাতকের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:২৪:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩
  • / ৩২২ বার পড়া হয়েছে

জিয়াউর রহমান, নাটোর 

সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে নবজাতকটি চিকিৎসার অভাবে জন্মের কয়েক ঘন্টা পরই মারা গেছে। গুরুদাসপুর পৌর সদরের কাঁচারীপাড়া ১০ শয্যের হাজেরা ক্লিনিকে সোমবার সকাল ৭ টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় শিশুটি মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই পরিবারকে ভীতি দেখিয়ে সোমবার ই শিশুটিকে দাফনের ব্যবস্থা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। রোববার মধ্যরাতে ওই ক্লিনিকে শম্পা বেগম (২৮) সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। শম্পা বেগম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। এটি তার দ্বিতীয় সন্তান ছিল।
প্রসূতি শম্পার সিজারিয়ান অপারেশন করেন তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম সোহেল। এর আগে একই ক্লিনিকে হার্নিয়া অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় দোষি সাবস্ত হয়ে বর্তমানে এই চিকিৎসক সাময়িকভাবে চাকুরিচ্যুতিতে আছেন।

প্রসূতির মামি আফরোজা বেগম ও বড়ভাই আবু সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, সোমবার ভোরে খবর আসে শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন। খবর পেয়ে তারা ছুটে যান ক্লিনিকে। সেখানকার সেবিকারা শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। এসময় শিশুটি ক্রমশ্য কালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছিল। একারণে চিকিৎসকের খোঁজ করা হয়। কিন্তু ক্লিনিকে জরুরী ভিত্তিতে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি।

তারা আরো বলেন, একজন সেবিকা অক্সিজেন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে কয়েক মিনিটের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে শিশুটির হয়তো এমন করুণ মৃত্যু হতো না। তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় শিশু মৃত্যুর বিষয়ে শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে জন্মের পর নবজাতক মৃত্যুর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (শিশু) মো. আতিকুল ইসলাম জানান, মূলত নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুর অপরিপক্ব ফুসফুস, জন্মের সময় ফুসফুসে ঠিকমতো অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারা এবং ঠান্ডাজনিত কারণে জন্মের পর নবজাতক মারা যেতে পারে।

সরকারি বিধিমোতাবেক ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকে ৩জন মেডিকেল অফিসার, একজন সার্বক্ষণিক আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং ৬ জন প্রশিক্ষিত (ডিপ্লোমা) সেবিকা (নার্স) থাকার কথা।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম সোহেল ও তার সহধর ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ক্লিনিকটির মালিক। সোহেলের পাশপাশি সাগর ভারত থেকে আয়ুর্বেদিকে অধ্যয়ণ শেষে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে হাজেরা ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম, অপারেশন এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর বাহিরে ক্লিনিকটিতে কোনো চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষিত নার্স নেই।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে শিশু মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন। ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসার অভাবে শিশুটি মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানাগেছে। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে দ্রæত অভিযান দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ওই ক্লিনিকে হার্নিয়া অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তিনি তদন্ত করেছিলেন। এরপরপরই চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেল সাময়িকভাবে চাকুরিচ্যুত হন।
ক্লিনিকের চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেল জানান, সুস্থ্য শিশুর জন্ম হয়েছিল। অভিভাবকদের অসচেতনার কারণে শিশুটি মারা যেতে পারে।

হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, হাজেরা ক্লিনিকে আপাতত আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। তিনি এবং তার ভাই চিকিৎসক সোহেল ও এ্যানেসথেশিয়া চিকিৎক বাহাউদ্দিন মিলেই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সোমবার সকালে চিকিৎসক না থাকলেও সেবীকাদের (নার্স) মোবাইলফোনে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক সোহেল। সেই চিকিৎসাই দেওয়া হচ্ছিল নবজাতকটিকে।
নাটোরের সিভিল সার্জন মুহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসার অভাবে নবজাক মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে দ্রত ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গুরুদাসপুরে হাজেরা ক্লিনিকে চিকিৎসার অভাবে নবজাতকের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৩:২৪:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

জিয়াউর রহমান, নাটোর 

সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে নবজাতকটি চিকিৎসার অভাবে জন্মের কয়েক ঘন্টা পরই মারা গেছে। গুরুদাসপুর পৌর সদরের কাঁচারীপাড়া ১০ শয্যের হাজেরা ক্লিনিকে সোমবার সকাল ৭ টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় শিশুটি মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই পরিবারকে ভীতি দেখিয়ে সোমবার ই শিশুটিকে দাফনের ব্যবস্থা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। রোববার মধ্যরাতে ওই ক্লিনিকে শম্পা বেগম (২৮) সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। শম্পা বেগম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। এটি তার দ্বিতীয় সন্তান ছিল।
প্রসূতি শম্পার সিজারিয়ান অপারেশন করেন তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম সোহেল। এর আগে একই ক্লিনিকে হার্নিয়া অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় দোষি সাবস্ত হয়ে বর্তমানে এই চিকিৎসক সাময়িকভাবে চাকুরিচ্যুতিতে আছেন।

প্রসূতির মামি আফরোজা বেগম ও বড়ভাই আবু সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, সোমবার ভোরে খবর আসে শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন। খবর পেয়ে তারা ছুটে যান ক্লিনিকে। সেখানকার সেবিকারা শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। এসময় শিশুটি ক্রমশ্য কালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছিল। একারণে চিকিৎসকের খোঁজ করা হয়। কিন্তু ক্লিনিকে জরুরী ভিত্তিতে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি।

তারা আরো বলেন, একজন সেবিকা অক্সিজেন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে কয়েক মিনিটের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে শিশুটির হয়তো এমন করুণ মৃত্যু হতো না। তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় শিশু মৃত্যুর বিষয়ে শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে জন্মের পর নবজাতক মৃত্যুর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (শিশু) মো. আতিকুল ইসলাম জানান, মূলত নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুর অপরিপক্ব ফুসফুস, জন্মের সময় ফুসফুসে ঠিকমতো অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারা এবং ঠান্ডাজনিত কারণে জন্মের পর নবজাতক মারা যেতে পারে।

সরকারি বিধিমোতাবেক ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকে ৩জন মেডিকেল অফিসার, একজন সার্বক্ষণিক আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং ৬ জন প্রশিক্ষিত (ডিপ্লোমা) সেবিকা (নার্স) থাকার কথা।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম সোহেল ও তার সহধর ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ক্লিনিকটির মালিক। সোহেলের পাশপাশি সাগর ভারত থেকে আয়ুর্বেদিকে অধ্যয়ণ শেষে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে হাজেরা ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম, অপারেশন এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর বাহিরে ক্লিনিকটিতে কোনো চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষিত নার্স নেই।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে শিশু মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন। ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসার অভাবে শিশুটি মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানাগেছে। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে দ্রæত অভিযান দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ওই ক্লিনিকে হার্নিয়া অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তিনি তদন্ত করেছিলেন। এরপরপরই চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেল সাময়িকভাবে চাকুরিচ্যুত হন।
ক্লিনিকের চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেল জানান, সুস্থ্য শিশুর জন্ম হয়েছিল। অভিভাবকদের অসচেতনার কারণে শিশুটি মারা যেতে পারে।

হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, হাজেরা ক্লিনিকে আপাতত আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। তিনি এবং তার ভাই চিকিৎসক সোহেল ও এ্যানেসথেশিয়া চিকিৎক বাহাউদ্দিন মিলেই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সোমবার সকালে চিকিৎসক না থাকলেও সেবীকাদের (নার্স) মোবাইলফোনে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক সোহেল। সেই চিকিৎসাই দেওয়া হচ্ছিল নবজাতকটিকে।
নাটোরের সিভিল সার্জন মুহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসার অভাবে নবজাক মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে দ্রত ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।