নড়বড়ে জোট, সংকটে বিএনপি
- আপডেট সময় : ১০:৩৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায় করতে গিয়ে নানামুখি সংকটে পড়েছে বিএনপি।
অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা এখন জেলে, যারা জেলের বাইরে আছেন তারাও সরাসরি আন্দোলনে নামতে পারছেন না। মাঠে নামলেই আটক হবেন। তাইতো তারাও রয়েছেন আত্মগোপনে। এছাড়া কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত সব নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।
এদিকে বিএনপির আন্দোলনে সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপির সাবেক নেতাদের গড়া দলগুলো। এসব দলের ব্যানারে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যসহ অনেক নেতা ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, স্বতন্ত্রভাবে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির আরও কিছু নেতা। যার ফলে চরম আস্থাহীনতার সংকটে পড়েছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির মত বড় একটি দলে এরকম দু একটা ঘটনা ঘটেতেই পারে।এসব ঘটনা আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে এগোচ্ছে। যত দলই নির্বাচনে আসুক না কেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন অর্থবহ হবে না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটে চলছে অস্থিরতা। একই সঙ্গে সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলন আর ঘর সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে বিএনপির পক্ষে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছে বিএনপি। পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে তারা। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকানো তাদের নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গড়ে ওঠা নতুন দলে যোগ দিয়ে কয়েকজন নেতার নির্বাচনে অংশ নেওয়া, তৃণমূল বিএনপির দৌড়ঝাঁপ, দীর্ঘদিনের মিত্র কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণায় বিব্রত বিএনপি।
এ বিষয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যারা সুযোগ সন্ধানি, তারা যেখানে যাবে সুযোগ খুঁজবে। তাদের এই আচরণ সন্দেহজনক।
দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, দু-চারজন বিপথগামী-স্বার্থবাদী ক্ষমতার জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছিল। এখন বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাই তারা ব্যক্তিস্বার্থে আবার তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে যাচ্ছে। এতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশে অর্থবহ হবে না। চাপ কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলের সংখ্যা বাড়াতে সরকার অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির আরেক আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা নবায়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যত চেষ্টা হোক, আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে সরকারকে। এ সময় আবারও নির্বাচনে না যাওয়ার প্রত্যয় জানান। আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেই বিনাভোটে সরকার গঠনের একই ষড়যন্ত্রের দিকে তারা এগোচ্ছে। এবার তারা পার পাবে না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু এবং ঢাকার ধামরাই পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জুকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব ও ফখরুল ইসলামকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এ দুজন ১৫ নভেম্বর ‘স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামের নতুন একটি জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় তাদের বহিষ্কারের কথা জানায় বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দলটির ১৫ হাজার ৮৯০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলা হয়েছে ৩৯৪টি। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৯৩ জন। ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৭টি মামলায় ৯ নেতা-কর্মীর মৃত্যুদন্ডাদেশ ও বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে ৪১৯ জনের।
সূত্র আরও জানায়, ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে সারা দেশে ১২৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৯০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় মারা গেছেন তিনজন, আহত হয়েছেন ৫৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০টি মামলায় অন্তত ২৯০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১ হাজার ২৫০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।