পরকীয়া প্রেমের জেরে গৃহবধূ চুমকি হত্যা, চেয়ারম্যানসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
- আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩
- / ৪০৩ বার পড়া হয়েছে
দবিরুল ইসলাম পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
পরকীয়া সম্পর্ক করে বিয়ে অতঃপর সামাজিক ও পারিবারিক অশান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে ফারহানা আক্তার চুমকি(৩৫) নামের গৃহবধুকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ৫ দিনপর গত বুধবার(২ আগষ্ট) রাত আড়াইটায় হত্যার প্রধান আসামী পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাকসহ ৩ জন কে গ্রেফতার করেছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ৮নং আওলাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক (৫০) এবং তার সহযোগী একই উপজেলার বয়রা-ছাতিনালী গ্রামের মৃত মালেক মন্ডলের পুত্র এমদাদুল (৪৮) ও মাইক্রো ড্রাইভার দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মরিচা গ্রামের ইয়াকুব আলীর পুত্র এমদাদুল হক (৪৫)।
নিহত ফারহানা আক্তার চুমকি জয়পুরহাট সদর উপজেলার মধ্যদড়িপাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমানের কন্যা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ্ ইফতেখার আহম্মেদ পিপিএম। গত বৃহঃস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিকালে দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, চুমকি এবং আঃ রাজ্জাক দু’জনরই পরিবার থাকা সত্ত্বেও পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।স্বামী সন্তান নিয়ে পাঁচবিবি দানেজপুর এলাকায় মতিয়ার চৌধুরীর বাসায় ভাড়া থাকতেন চুমকি। তার স্বামী সনি কামদিয়া বাজারে দোকানদারি করেন। সারাদিন বাসা ফাঁকা থাকায় সুযোগ বুঝে নিহত চুমকির সাথে পাঁচবিবি উপজেলার ৮নং আওলাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে চুমকি তার প্রথম স্বামী এজাজুল হক ওরফে সনিকে তালাক দিয়ে ওই চেয়ারম্যানকে ২০২০ সালে গোপনে তারা বিয়েও করেন। পরে পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলে, পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ২০২১ সালে চেয়ারম্যান ফারহানা কে তালাক দেয়। এরপর রাজ্জাক চেয়ারম্যান আবার বিয়ে করেন জয়পুরহাট শহরের এক মেয়েকে।সেখানেও ৬ মাস সংসার করার পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। এভাবে যোগাযোগ না করে কিছু দিন কাটানোর পর তাদের মধ্যে আবার যোগাযোগ হয় এবং বিভিন্ন সময় চুমকি চেয়ারম্যান কে ব্লাকমেইল করতে থাকে। আর এতে করে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সম্মানহানী হওয়ায় ফারহানা কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সাবেক এই চেয়ারম্যান। সে কারণেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চুমকিকে বিয়ের কথা বলে চেয়ারম্যান রাজ্জাক গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) নিহত চুমকিকে পাঁচবিবি উপজেলার দানেজপুর মহল্লার মতিয়ার চৌধুরীর ভাড়া বাসা থেকে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আসে মাইক্রো চালক এমদাদুল। এরপর পৃথক পৃথক জায়গা থেকে হত্যাকারী চেয়ারম্যান এবং তার সহযোগীরা গাড়িতে উঠে। তারা সেই রাতে নিহত চুমকিকে ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় নিয়ে আসে এবং গাড়ীর মধ্যেই গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে চুমকিকে হত্যা করে। এরপর চুমকিকে খারাপ মেয়ে বলে আখ্যায়িত করতে কথিত পতিতা এলাকা মোজামের আম বাগানে চুমকির লাশ ফেলে রেখে চলে যায়। পরে ঘোড়াঘাট উপজেলার ১নং বুলাকীপুর ইউনিয়নের কালুপাড়া এলাকায় মোজামের আম বাগানে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। পরে তার পরিচয় শনাক্ত হলে নিহতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করে। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহযোগীতায় ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে হত্যায় জড়িত চেয়ারম্যানসহ তার সহযোগীদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়।গ্রেফতার ৩জন আসামীকে গত ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।