বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা ও এর প্রতিকার
- আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
- / ৮৭৩ বার পড়া হয়েছে
সাইদ হোসেন নাঈম
শিক্ষা জীবনের উচ্চমাধ্যমিক পর্যার পার হওয়ার পর একজন শিক্ষর্থী রাত জাগা পরিশ্রম এবং এক জীবন সাধনার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নামক ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য যখন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, তখন তার জীবনে উঁকি দিতে নানা স্বপ্ন, নানা আশা, নানা সম্ভাবনা।কিছু অর্জন করতে পারা, এবং নানা কিছু অর্জন করতে পারার সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষকে সামনে রেখে শুরু হয় জীবনের একটি নতুন অধ্যায়।
চোখ-মুখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তখন তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় টিকে একটি নতুন পৃথিবী মনে হয়।চারিদিকে নানা জন, নানা মত, নানা বাস্তবতা।সারা দেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এক এক অঞ্চলের মানুষ এক এক ধরনের হওয়ায়, প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তিত্ববোধ এক রকম না হওয়ায়, নতুন দের মাঝে প্রথম প্রথম বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক ঠিক তেমন ভাবে গড়ে উঠে না।একে অপরের মনের সাদৃশ্য গুলোর মিলকে সম্মান জানিয়ে, মনের বৈসাদৃশ্যের বিপরীতকতার মতামতের অমিল গুলোকে শ্রদ্ধা পূর্বক সহজ ভাবে মেনে নেওয়াটা এমন বন্ধুত্বপূ্র্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠা জরুরী।গড়ে উঠতে সময় লাগে।
নানাবিধ বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে তৈরি হয় নানা রকম মানসিক চাপ।এই চাপ থেকেই তৈরী হতে থাকে নানারকম মানসিক সমস্যা। পরিবার থেকে দূরে থেকে, সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখে নতুন পরিবেশর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া টা অবশ্যই সহজ কোন কাজ নয়।ডিপার্টমেন্টর চাপ, পড়াশোনা, অর্থনৈতিক চিন্তা, প্রেম ঘটিত বিষয়- প্রিয় বিয়োগ ইত্যাদি নানা চিন্তা থেকে মানসিক শান্তির জন্য সঙ্গদোষের প্রভাবে একজন শিক্ষার্থী হয় মাদকাসক্ত হয়ে পরে, নয়তো অতি আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।মানসিক সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্নহত্যার প্রবণতা,অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর হার বর্তমানে অতিমাত্রায় বেড়ে গিয়েছে বলে লক্ষ করা যাচ্ছে।জীবনের যেকোন কঠিন বাস্তবতাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে না পারা, প্রিয়জন-পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে, তাদের আত্নত্যাগ ও নিজের স্বপ্নকে কে মূল্য না দিয়ে অতি আবেগের বশবর্তী হয়ে তথাকথিত মানসিক শান্তির খোঁজে মাদকাসক্তের মতো বিপদগামীতা অথবা আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া টা নিঃসন্দেহে জীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ভুল সিদ্ধান্ত।এতে পরিবার, সমাজ, দেশ তথা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মৃত্যু হয় সম্ভাবনার।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার প্রতিকারের ব্যাপারটি খুবই সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।প্রথমত আমাদের প্রয়োজন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে মানসিক সমস্যা টিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং একটি রোগ হিসাবে দেখা।এমন কিছু হলে কাউন্সিলিং এর জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া, সমস্যার ব্যাপারটি তুলে ধরা।তাছাড়া সুখি জীবনযাপন করার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একটি জনপ্রিয় গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে “সকলের সাথে সুসম্পর্ক” রাখতে পারার বিষয়টি জীবনকে হাসি-খুশি “সুখি” করে তোলে।জীবনের যেকোন সমস্যাকে সহজ ভাবে মেনে নেওয়া এবং ধৈর্য সহকারে মোকাবিলা করার শক্তি নিজেকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য ম্যাচিউর হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।এতে ভবিষ্যৎ জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার যে শিক্ষা অর্জিত হয়, এই শিক্ষা কেউ কাউকে কখনো শিখিয়ে দিতে পারে না। “সমাজে কারো কাছ থেকে কিছু আশা করতে নেই।” এই নির্মম সত্যটি যখন একজন শিক্ষার্থী নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে, তার কাছে তখন জীবনের যেকোন কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করার সামর্থ অর্জন হয়।নিজেকে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হিসেবে পরিচয় করাতে পারে।অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য অন ক্যাম্পাস জব চালু করা।
তাছাড়া নিজের চাহিদা গুলোকে সীমাবদ্ধ রাখা, জীবনে যা অর্জিত হয়েছে তাতেই মানসিক আত্মতৃপ্তি খোঁজা, একজন মানুষ সে যেই অবস্থানেই থাকুক না কেন, সেই অবস্থান টিকে ভালোবাসে আপন করে নিয়ে মানসিক ভাবে সন্তুষ্ট থাকাটা জরুরী।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী একটি দক্ষতাটি অর্জন করার মাধ্যমে, সে দক্ষতাটিকে কর্মজীবন হিসেবে বেঁছে নিয়ে, যে কাজে আনন্দ পায় তার সে কাজটিই কর্মজীবন হিসেবে বেঁছে নেওয়া উচিত।এতে করে জীবনে সর্বোচ্চ সফলতা লাভ লাভ সহ জীবনকে একটি সুখী জীবন হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
পরিশেষে সামগ্রিকতা বিবেচনায় ধর্মীয় মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবন গড়লে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জীবন হয় সুস্থ-স্বাভাবিক, আনন্দমুখর, সফল-সার্থক জীবন।জীবন হয় সুখের,মনের সুখই তো প্রকৃত সুখ।
লেখক: সাইদ হোসেন নাঈম
শিক্ষার্থী:জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়