যুগ যুগ ধরে ২৩ টি পরিবারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চামঢাকির মন্ডপ মেলা ও বৌ মেলা
- আপডেট সময় : ০৯:২০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪
- / ৩৩২ বার পড়া হয়েছে
ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের মানুষ আর তার শৈশবের স্মৃতিতে গ্রামের মেলা জড়িয়ে নেই, এটা হতেই পারে না।’ গ্রামের শান্তিপূর্ণ জীবনে গ্রামীণ মেলা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে হাজির হয়। দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডির বাইরে মেলা যেন একাটা দমকা হাওয়া। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মানুষে মানুষে মিলবার জাত-পাত, ধর্মীয় পরিচয় পেছনে ফেলে এমন মিলবার জায়গা আর কোথায়? বাংলার এই মেলা ছাড়া।তবে আধুনিকতার কশাঘাতে ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর চরিত্র বদলাচ্ছে।
দিনাজপুরের বিরামপুরে প্রতিবাংলা বর্ষের জৈষ্ঠ মাসের ২য় বুধবার আনন্দের বন্যা নিয়ে এই চামঢেকির মন্ডপ মেলা ও বৌ মেলার আয়োজন করে আসছে উপজেলার ৫নং বিনাইল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পুইনন্দা গ্রামে বসবাসরত ২৩টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের সদস্যরা এমনটি জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কনক বর্মন।
স্থানীয়রা জানান পুইনন্দা গ্রামে ব্রিটিশ আমলে চামঢাক নামে একজন বসবাস করে আসছিলেন তার নাম ধরে পুইনন্দা গ্রামে মন্দিরে এই মেলা হতো। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমল থেকে প্রাচীন কালি মন্দিরে এই মেলায় ভারতসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের সমাগম ঘটতো। পুইনন্দা গ্রামের ভেতরে রয়েছে চামঢেকির মন্দির এবং রাস্তার ধারে ১০০ বছর আগের তেঁতুল গাছ যার পার্শ্বে রয়েছে কালি মন্দির এবং সামনে বট গাছের পার্শ্বে শিব মান্দির। জৈষ্ঠ্য মাসের ২য় বুধবার উপলক্ষে এখানে দেড় দিনব্যাপী চামঢেকির মেলা বসে। ১ম দিন বুধবার বিকেল ৩ টার পর মেলা শুরু হয় চলে রাত্রি ১২ টা পর্যন্ত এই দিনে নারীদের চেয়ে পুরুষদের উপস্থিতি বেশি হয় এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে নারীদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় ঐ দিনের মেলাকে বৌ মেলা বলা হয় বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটি।
বিনাইল ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের উপজেলাসহ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষর যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই চামঢাকির মন্ডপ মেলা ও বৌ মেলায় আসেন এবং আগের যুগে ভারত পাকিস্তান থেকেও অনেকে আসতেন এই মেলায়।মাধু মাস হিসেবে ন্যানানা রকম ফলোর দোকান, কসমেটিক, খেলনা, কাঠের তৈরি খেলনা সামগ্রী, মিষ্টি, দই, আচার, পানসিগারেট, কাপড়সহ হরেক রকমের দোকান মেলায় লক্ষ্য করা যায়।যার মধ্যে রয়েছে আম, তরমুজ, লিচু,বাঙ্গী,কলা, পেয়ারাসহ আরো অনেক ফলের দোকান।এর পাশাপাশি রয়েছে জিলাপি, মিষ্টি, বাতাসা,খোরমা,বুট-বুন্দিয়া, হরেকরকম আচার ও ফুচকা, চটপটি, ভাজা-পোড়াসহ হরেকরকম মাখার দোকান। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারের জন্য কামারের তৈরি জিনিসপত্রের দোকান, কাঠের তৈরি জিনিসপত্রের দোকান, কসমেটিক ও খেলনাসামগ্রীর দোকান, পান-সিগারেটসহ প্রায় ২০০টির বেশি দোকান রয়েছে। এসমস্ত দোকান ও মেলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন বিনাইল ইউনিয়ন গ্রাম পুলিশ সদস্যগন।
মেলায় জিলাপি দোকান নিয়ে আসা বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর গ্রামের মৃত আবেদ আলী ছেলে ছিদ্দিক (৬২) জানান প্রায় ৪০ বছর ধরে এই মেলায় বাবার সাথে দোকান নিয়ে আসেন। মেলায় যেমন লোকজনের সমাগম ঘটে তেমন বেচাকেনাও হয়।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কনক বর্মন বলেন যুগ যুগ ধরে আমারা সনাতন ধর্মাবলম্বী ২২ টি পরিবারের সদস্যরা ১ একর জমির উপর এই মেলাটি আয়োজন করে আসছি।প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি ধরে রাখতে সংশ্লীষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
বিনাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর বাদশা বলেন,যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলা যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় এজন্য আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম ও ইউপি সদস্যগন মেলায় উপস্থিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেছি।
বিরামপুর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী শান্ত কুমার কুন্ডু বলেন,এই মেলাটি আগে গ্রামের ভেতরে হতো বাড়িঘর নির্মাণ হওয়ায় আজ মন্দিরের জায়গাসহ রাস্তার উপর হচ্ছে। এই মন্দিরের দেবত্ব অনেক জায়গা রয়েছে এই জায়গাগুলো ফিরিয়ে আনতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বিরামপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান পারভেজ কবীর বলেন,চামঢেকির মেলা ও বৌ মেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ধরে রাখতে উপজেলা পরিষদ থেকে আগামী বছর সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।