কিশোর কিশোরীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও আলোকিত জীবন
- আপডেট সময় : ০৮:০৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৩৩১ বার পড়া হয়েছে
মোঃ আনিছুর রহমান
জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ পিরিয়ড হলো কৈশোর কাল। কাঁচামাল থেকে কোনো বস্তু তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসে এক পর্যায়ে পৌঁছানো হয় অতঃপর বস্তু টিকে ইচ্ছে মতো আকৃতি দিয়ে তৈরির কাজ চূড়ান্ত করা হয়। যেমন কাগজ তৈরির মন্ড। মানব জীবনের ধাপ সমুহের মধ্যে কৈশোর কালটি মূলতঃ এমনই একটি ধাপ।
সাইকোলজী তে এটিকে বলা হয় এডোলিসেন্স পিরিয়ড – বয়ঃসনধি কাল। মানব মন নিয়ে লিখেন, গবেষণা করেন, এমনকি কবি সাহিত্যিক গণ ও বয়ঃসনধি কাল নিয়ে আলোচনা করতে ছাড়েন নি।এ বিষয়ের উপর তাঁদের কথা, বক্তব্য, গবেষণা, কবিতা নিয়ে আলোচনা শুরু করলে শেষ প্রান্তে পৌঁছা মুশকিল হয়ে যাবে বিধায় উদ্ধৃতি তোলা থেকে নিবৃত্ত হয়ে মূল আলোচনায় চলে আসি।
অভিভাবক হিসেবে সকলেই চায় সন্তান আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। সমাজ চায় ছেলে মেয়েরা সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারি হিসেবে গড়ে উঠবে । রাষ্ট্র চায় সৎ দক্ষ নাগরিক। চাওয়া সবার ঠিক আছে কিন্তু পাওয়ার রাস্তাটি সঠিক আছে কিনা সেটা নিয়ে শুধু ভাবলেই চলবে না কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরী। ব্যতিক্রম শব্দটি ভাষার আছে বলে আমরা মাঝে মধ্যে স্বস্তি বোধ করি এই ভেবে যে পরিবেশ পরিস্থিতি যা হোক না কেনো আমরা যা কামনা করি তা তো এমনিতেও হতে পারে। যার কারণে কিছু বাগধারা ভাষায় প্রবেশ করে ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। যেমন- গোবরে পদ্ম ফুল।আপনি কি খেয়াল করেছেন অনেক অসহায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান এমন চমকপ্রদ সাফল্য দেখায় যা দেখে হতবাক হতে হয়? এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো এদের সৃষ্টিগত মেধার সাথে যুক্ত হয় বাবার গায়ের ঘাম, আর মায়ের অশ্রু।
জন্মের পর মানুষের জীবন যে ধাপ গুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যায় তাহলো >নবজাতক >শিশু >কিশোর> যুবক> প্রৌঢ় >বৃদ্ধ। উল্লেখিত প্রতিটি ধাপে মানব জীবনের চাহিদা, চিন্তা, চেতনা ও অনুভূতির প্রচণ্ড রকমের ভিন্নতা আছে এটি বোঝার জন্য বেশি জ্ঞান চর্চার দরকার নেই। এর মধ্যে কৈশোর কাল তথা বয়ঃসনধি কালটি সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কারণ এই সময়ের পূর্বের অংশ শৈশব কাল পর নির্ভরশীল থাকার কাল পরের অংশ যৌবন কাল এবং প্রৌঢ় কাল আত্ম নির্ভরশীল কাল। নব জাতক ও বার্ধক্য অবস্থা কে একটু আলাদা করেই রাখলাম। পক্ষান্তরে কৈশোর কাল এমন একটি মধ্যম অবস্থা যেখানে মানব অবস্থাটি থাকে পর নির্ভরশীল তৎসহ কিছুটা আত্ম নির্ভরশীল। ভালো মন্দ বোঝে কিন্তু ভালো মন্দের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে থাকে বেখবর। আবেগ বিবেক দুটি থাকে কিন্তু আবেগের থাকে অনেক প্রাধান্য। সুখ দুঃখের অনুভূতি থাকে ঠিকই কিন্তু এর মাত্রা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয় বার বার। কেউ যদি বলে এটা ঠিক সেদিকে ছুটে আসে অতঃপর কেউ যদি বলে ঐটা ঠিক আবার সেই দিকে ছুটে যায়।
এই অবস্থায় তাদের জীবন সঠিক পথে পরিচালিত হতে প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা। বর্তমান যে যূগে আমরা পদার্পণ করেছি তাকে এমন কিছু নামে অভিহিত করা হয় যে নামের অস্তিত্ব আগে ছিলো না। তাহলো – ডিজিটাল যুগ, বিশ্বায়নের যূগ ইত্যাদি । যার আশীর্বাদে বা করাল গ্রাসে দুনিয়ার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, চাল, চলন ধ্যান, ধারণা সব কিছু একাকার হয়ে যেতে শুরু করেছে । বয়ঃসনধি কালের সন্তানেরা যারা বুদ্ধিমান, যাদের অভিভাবক সচেতন তারা ঠিকই উপকার নিচ্ছে অপরদিকে যারা নির্বোধ তাদের সন্তানেরা ক্ষতিকর প্রভাবে নিমজ্জিত হচ্ছে এই কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। স্মার্ট ফোন সহ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো আজ বিশ্বের সকল প্রকার তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। যা জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন কে সহজ করেছে বটে সমান্তরাল ভাবে অনৈতিক ও অশ্লীলতায় ডুবিয়ে দিতে অতিউদ্বেগ ও আশঙ্কা জনক ভুমিকা রেখে চলেছে। ক্ষতিকর প্রভাবটি পড়ছে কিশোরদের উপর। মহা সমস্যার জায়গাটি হলো বর্ণিত বিষয় নিয়ে ভালো মন্দের উপলব্ধিতে রয়েছে মতোপার্থক্য। এমনকি তা মতোবিরোধে পরিণত হয়ে চরম দ্বন্দ্বের দিকে এগিয়ে যায়। গুনীজনদের মধ্যে কেউ যেটিকে ভালো মনে করেন আরেক দল সেটিকে মন্দ বলে চিহ্নিত করেন। বুদ্ধির চর্চা এক সময় পাশাপাশি বা একটু আগ পাছ হয়ে চলতো। এখন চলছে প্রায় বিপরীত দিকে। এই অবস্থাটি কিশোর মনে আঘাত করে। তারা হয় বিভ্রান্ত। কিশোরদের মানসিক বিকাশে প্রচন্ড রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। যার প্রকাশ ঘটে আচার, আচরণ, চাল, চলন পোশাক আশাকে।কিশোর অপরাধ, কিশোর গ্যাংক, কিশোর সংশোধনাগার, এ শব্দ গুলো অভিধানে নতুন সংযোজন। এই বয়সে এসে কতো যে সন্তান পিতা মাতার আশা আকাঙ্ক্ষায় কুঠার আঘাত করে বিপথে ধ্বংসের পথে রওয়ানা করছে তার হিসেব কি করছি আমরা?
সুতরাং এই অবস্থা থেকে কিশোর কিশোরী সন্তানদের রক্ষা করে আলোকিত জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠনে অভিভাবক গণকে শক্ত ভুমিকা পালন করা ব্যতীত অন্য কোনো পথ এই সময়ে আছে তা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই।
এটি সব চেয়ে সহজ সেই তুলনায় যে গুলো নিয়ে পার্থিব জীবনে আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। অথচ আপনি একবার চিন্তা করছেন না যাদের জন্য আপনি এসব করছেন তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ব্যবসা, বানিজ্য, চাকরি, রাজনীতি সহ নানা ব্যস্ততার মাঝেও অনেকে সন্তানদের দিকে গভীর ভাবে লক্ষ্য রাখছেন আবার অনেকে এসব নিয়ে এমন ভাবে ডুবে থাকেন সময় পান না সন্তানের দিকে একটু নজর দিতে। যখন হুস ফেরে তখন আর করার কিছু থাকে না। যে পিতা মাতানিজেরাই বিপথে তাদের নিয়ে হিসেব করছি না।
অভিভাবক গণকে বলছি আপনার কাজের তালিকা যতো লম্বা হোক না কেন নিজ সন্তানদেরকে গড়ে তোলার কাজটি এক নম্বরে রাখুন সক্ষম হলেই দেখবেন এর চেয়ে বড়ো সফলতা আর কিছু নেই।