ঢাকা ০২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আত্মসমর্পণের পর কারাগারে বিএনপি নেতা ইশরাক দুর্ঘটনার কবলে ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবৈধ জুস তৈরির কারখানায় অভিযান, ১০ লাখ টাকা জরিমানা দেশ এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল ‘ভারত-চীনকে যুক্ত করতে পারলেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব’ পাঁচবিবিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রেবেকা সুলতানার মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত বিরামপুরে সিনিয়র টি-২০ ক্রিকেট লীগের খেলোয়াড় বন্টন ও নিলাম অনুষ্ঠিত পাঁচবিবিতে শেষ মুহূর্তে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রেবেকা সুলতানার গণসংযোগ পাঁচবিবিতে পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করন নামাজ মুমিনের শ্রেষ্ঠ ইবাদত

বাংলাদেশে কোরবানির চামড়ার দাম কম কেন?

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩
  • / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ চামড়ার সরবরাহ হওয়ায় কোরবানি পশুর চামড়ার দাম তলানিতে নেমেছে।

চামড়ার খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার দাম তলানিতে নামার মূল কারণ চাহিদা কমে যাওয়া। তবে, সরকার গতবারের তুলনায় এবার লবণ-যুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছয় শতাংশ বাড়িয়েছে। চামড়ার দাম ধরে রাখতে ঈদের পরবর্তী সাত দিন ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া না আনার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।

সরকার এ বছর ঢাকায় লবণ-যুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর এই দাম ছিল ঢাকায় ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। গত বছর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। যা এ বছরও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

এদিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০ বছর আগে প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম গড়ে ১৫০০ টাকা ছিল। গত দুই-তিন বছর ধরে এটি গড়ে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে।

রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার বাসিন্দা শরীফুল খান বলেন, ২০১২-১৩ সালের দিকে চার থেকে পাঁচ মণ ওজনের গরু কোরবানি দিলে সেটির চামড়া বিক্রি করতে পারতাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর গরু যদি বড় হতো তাহলে বিক্রি হতো ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এখন সেই চামড়া হয়ে গেছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। খুব বেশি হলে ৭০০ টাকা হয়। এটা কমা শুরু হয়েছে ২০১৬-১৭ সাল থেকে।

আরেক বাসিন্দা আবুল আহমেদ বলেন, ১০ বছর আগে একটা গরুর চামড়া তিন হাজার থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেতো। প্রত্যেক ঈদে প্রচুর লোক চামড়া কেনার জন্য আসত। আমরা দামাদামি করতাম। চামড়া বিক্রি করে সেই টাকাটা গরিবদের দিয়ে দিতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমানে কোনো মূল্যই নাই। চামড়া এখন ফ্রি দিয়ে দেওয়ার মতো। এটা কেনার জন্য খুব একটা আগ্রহ কারো দেখি না। মাদরাসার লোকদের আমরা ডেকে চামড়াটা দিয়ে দিচ্ছি। তারাও এটা নেওয়ার সময় বলছেন যে, চামড়া নিয়ে এখন আর কোনো আয় হয় না।

 

আগে কোরবানির সময় চামড়া কিনে সেগুলো ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন সালাউদ্দিন আহমেদ। এখন আর তিনি এ ব্যবসা করছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে চামড়ার দাম কমে গেছে। এখন কোনো লাভ হয়না। ২০১৭ সালের আগে ট্যানারির কর্মকর্তারা আমাদের কাছে এসে চামড়ার একটা গড় দাম ধরে অগ্রিম টাকা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে এই অবস্থা নেই। তখন প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় কিনে ১৭০০ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন ট্যানারির মালিকরা আর আসেন না। আসলেও ২০০ টাকা থেকে দাম ধরা শুরু করেন। আর সর্বোচ্চ দাম ৫০০ টাকার বেশি হয় না।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। এর কারণে দেশের ট্যানারির মালিকদের কাছে চামড়ার চাহিদা কম। আমি যদি দাম না পাই তাহলে কাঁচা চামড়া আমি কিভাবে দাম দিয়ে কিনব? বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানির একটা বড় বাজার চীন। তবে, চীন বেশ কম দামে এদেশ থেকে চামড়া কিনছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। ২০১৫ সালের দিকেও বাইরের দেশে চামড়ার বেশ চাহিদা ছিল। কিন্তু এরপর থেকে কমে গেছে। বর্তমানে কিছু চামড়া চীন, হংকং ও জাপানে রপ্তানি করা হয়। সে সব দেশেও চামড়ার চাহিদা কমেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ হলেও সেখানে রপ্তানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের সনদ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিবেশ স্বীকৃতি সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশগত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারায় এর কোনটিই নেই। এ কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ঢুকতে পারছে না।

 

তিনি বলেন, রপ্তানি কমার পেছনে দায় সরকারের। ২০১৬ সালে সরকার অপরিকল্পিতভাবে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিলেও সেটা হয়নি। এ ছাড়া খুব বেশি ট্যানারি সেখানে গিয়ে স্থায়ী হতে পারেনি। ২০ থেকে ৩০টি ট্যানারিও যদি এলডাব্লিউডি সার্টিফায়েড করতে পারতাম, তাহলেও এ রকম পরিস্থিতি হতো না। এ ছাড়া বর্তমানে কৃত্রিম চামড়া এবং প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহারের কারণে চামড়ার চাহিদা বিশ্বজুড়েই কমে গেছে। চামড়ার পণ্যের তুলনায় কৃত্রিম চামড়া থেকে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার সহজ ও আরামদায়ক হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে চামড়া উৎপাদন আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে। যার কারণে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই চাহিদার তুলনায় যোগান বাড়ায় দাম পড়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ ২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লবণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষিত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার লবনযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছাগলের চামড়ার দাম প্রতিবর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, চামড়ার দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া চামড়ার দাম যাতে ঠিক থাকে সে জন্য ঈদের পর প্রথম সাত দিন পশুর চামড়া বাইরে থেকে ঢাকায় ঢুকবে না। এতে করে চামড়া যারা বিক্রি করেন তারা দামাদামির সুযোগ পাবেন। চামড়ার ভালো দাম পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। গত বছরও কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার পর দাম বেড়েছিল।

তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করলে খুব একটা দাম পাওয়া যায় না। আমরা চাই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে মানসম্পন্ন চামড়া ও পণ্য রপ্তানি করতে। যাতে বেশি দাম পাওয়া যায়। তবে, চামড়া রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শর্ত নিশ্চিত করার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বাংলাদেশে কোরবানির চামড়ার দাম কম কেন?

আপডেট সময় : ০১:২৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ চামড়ার সরবরাহ হওয়ায় কোরবানি পশুর চামড়ার দাম তলানিতে নেমেছে।

চামড়ার খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার দাম তলানিতে নামার মূল কারণ চাহিদা কমে যাওয়া। তবে, সরকার গতবারের তুলনায় এবার লবণ-যুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছয় শতাংশ বাড়িয়েছে। চামড়ার দাম ধরে রাখতে ঈদের পরবর্তী সাত দিন ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া না আনার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।

সরকার এ বছর ঢাকায় লবণ-যুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর এই দাম ছিল ঢাকায় ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। গত বছর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। যা এ বছরও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

এদিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০ বছর আগে প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম গড়ে ১৫০০ টাকা ছিল। গত দুই-তিন বছর ধরে এটি গড়ে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে।

রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার বাসিন্দা শরীফুল খান বলেন, ২০১২-১৩ সালের দিকে চার থেকে পাঁচ মণ ওজনের গরু কোরবানি দিলে সেটির চামড়া বিক্রি করতে পারতাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর গরু যদি বড় হতো তাহলে বিক্রি হতো ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এখন সেই চামড়া হয়ে গেছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। খুব বেশি হলে ৭০০ টাকা হয়। এটা কমা শুরু হয়েছে ২০১৬-১৭ সাল থেকে।

আরেক বাসিন্দা আবুল আহমেদ বলেন, ১০ বছর আগে একটা গরুর চামড়া তিন হাজার থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেতো। প্রত্যেক ঈদে প্রচুর লোক চামড়া কেনার জন্য আসত। আমরা দামাদামি করতাম। চামড়া বিক্রি করে সেই টাকাটা গরিবদের দিয়ে দিতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমানে কোনো মূল্যই নাই। চামড়া এখন ফ্রি দিয়ে দেওয়ার মতো। এটা কেনার জন্য খুব একটা আগ্রহ কারো দেখি না। মাদরাসার লোকদের আমরা ডেকে চামড়াটা দিয়ে দিচ্ছি। তারাও এটা নেওয়ার সময় বলছেন যে, চামড়া নিয়ে এখন আর কোনো আয় হয় না।

 

আগে কোরবানির সময় চামড়া কিনে সেগুলো ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন সালাউদ্দিন আহমেদ। এখন আর তিনি এ ব্যবসা করছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে চামড়ার দাম কমে গেছে। এখন কোনো লাভ হয়না। ২০১৭ সালের আগে ট্যানারির কর্মকর্তারা আমাদের কাছে এসে চামড়ার একটা গড় দাম ধরে অগ্রিম টাকা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে এই অবস্থা নেই। তখন প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় কিনে ১৭০০ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন ট্যানারির মালিকরা আর আসেন না। আসলেও ২০০ টাকা থেকে দাম ধরা শুরু করেন। আর সর্বোচ্চ দাম ৫০০ টাকার বেশি হয় না।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। এর কারণে দেশের ট্যানারির মালিকদের কাছে চামড়ার চাহিদা কম। আমি যদি দাম না পাই তাহলে কাঁচা চামড়া আমি কিভাবে দাম দিয়ে কিনব? বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানির একটা বড় বাজার চীন। তবে, চীন বেশ কম দামে এদেশ থেকে চামড়া কিনছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। ২০১৫ সালের দিকেও বাইরের দেশে চামড়ার বেশ চাহিদা ছিল। কিন্তু এরপর থেকে কমে গেছে। বর্তমানে কিছু চামড়া চীন, হংকং ও জাপানে রপ্তানি করা হয়। সে সব দেশেও চামড়ার চাহিদা কমেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ হলেও সেখানে রপ্তানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের সনদ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিবেশ স্বীকৃতি সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশগত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারায় এর কোনটিই নেই। এ কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ঢুকতে পারছে না।

 

তিনি বলেন, রপ্তানি কমার পেছনে দায় সরকারের। ২০১৬ সালে সরকার অপরিকল্পিতভাবে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিলেও সেটা হয়নি। এ ছাড়া খুব বেশি ট্যানারি সেখানে গিয়ে স্থায়ী হতে পারেনি। ২০ থেকে ৩০টি ট্যানারিও যদি এলডাব্লিউডি সার্টিফায়েড করতে পারতাম, তাহলেও এ রকম পরিস্থিতি হতো না। এ ছাড়া বর্তমানে কৃত্রিম চামড়া এবং প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহারের কারণে চামড়ার চাহিদা বিশ্বজুড়েই কমে গেছে। চামড়ার পণ্যের তুলনায় কৃত্রিম চামড়া থেকে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার সহজ ও আরামদায়ক হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে চামড়া উৎপাদন আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে। যার কারণে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই চাহিদার তুলনায় যোগান বাড়ায় দাম পড়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ ২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লবণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষিত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার লবনযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছাগলের চামড়ার দাম প্রতিবর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, চামড়ার দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া চামড়ার দাম যাতে ঠিক থাকে সে জন্য ঈদের পর প্রথম সাত দিন পশুর চামড়া বাইরে থেকে ঢাকায় ঢুকবে না। এতে করে চামড়া যারা বিক্রি করেন তারা দামাদামির সুযোগ পাবেন। চামড়ার ভালো দাম পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। গত বছরও কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার পর দাম বেড়েছিল।

তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করলে খুব একটা দাম পাওয়া যায় না। আমরা চাই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে মানসম্পন্ন চামড়া ও পণ্য রপ্তানি করতে। যাতে বেশি দাম পাওয়া যায়। তবে, চামড়া রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শর্ত নিশ্চিত করার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়।