ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা

ডি.এইচ. রনি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৫:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩
  • / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে

সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা

আত্মত্যাগ,সাহায্য- সহযোগিতার দ্বারা মনুষ্যত্বের বহিঃপ্রকাশ ও পারিশ্রমিকহীন সেবার মানসিকতার মাধ্যমে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মে কোন সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে অথবা ব্যক্তিগতভাবে কাজ করাই হলো স্বেচ্ছাসেবা। এটি হওয়া চাই স্বপ্রণোদিত। “আপন নাক কেটে পরের যাত্রা নষ্ট করা” এই প্রবাদের সাথেও অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাথমিক মিল খুঁজে বেড়ায় যদিও সত্যিকার অর্থে এর অর্থ ভিন্ন।

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ‘নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সেরা উপায় হলো অন্যের সেবায় নিজেকে হারিয়ে দেয়া।’ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে জড়িত হাজার হাজার ব্যক্তি শুধুমাত্র অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে বিনে পয়সায় কাজ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন যা একান্তই নিজের নিরেট আত্মতৃপ্তি এবং আনন্দের জন্য।

স্বেচ্ছাসেবাতে এমন এক ধরণের অনুভূতি আর আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় যা একমাত্র এই কাজে সংশ্লিষ্ট মানুষরাই অনুধাবন করতে পারে। কেউ কাউকে সাহায্য করার পর সাহায্যপ্রাপ্ত অসহায় মুখ গুলো যে ধন্যবাদ জানায় সেটা একান্ত মনের ভেতর থেকে আসে আর এই নির্ভেজাল ভালোবাসা ই স্বেচ্ছাসেবকদের জীবনের সবচেয়ে পরম আত্মতৃপ্তি।

স্বেচ্ছাসেবকরা সমাজে সহযোগিতার বীজ বুনে শুধু সমাজকেই সুখী করেনা বরং নিজেও লাভ করে অনাবিল সুখ। যে সুখ অর্থ দিয়ে ক্রয় করা অসম্ভব। তাই নিজের আত্মাকে সুখী করে তোলার একটা উত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবা। আপনার আশপাশের অনাথ, অসহায় ও দরিদ্র নারী-পুরুষ-শিশু আছে যাদের মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারে শুধু আপনার সামান্য সহযোগিতায়, আর সেই হাসিমাখা মুখ গুলো ই আপনার অন্তরকে করবে পুলকিত। আপনি হৃদয়ে অনুভব করবেন এক অজানা আনন্দ ।

শুধু অর্থ-সম্পদ দিয়েই স্বেচ্ছাসেবা হয়না। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বিপদে পরা, অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়ানো হচ্ছে আসল স্বেচ্ছাসেবা। আর হ্যা, শুধু মানুষই নয় আমাদের চারপাশের পশু-পাখি, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজের অন্যান্য সকল বিষয়ের প্রতি আমাদের মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে।দেশে অনেক ধরনের সামাজিক সংগঠন আছে যেগুলো কাজ করতে চায় সমাজের কল্যাণে। এর যে কোনো একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, রোগীদের রক্ত দান, দরিদ্রদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা আদায়ের ব্যবস্থা করণ, পথ শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ,পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, বৃক্ষরোপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা সেবায় কাজ করা যায়।

অনেকের মনে আবার প্রশ্নও থাকে যে, শুধু কি আত্মতৃপ্তির জন্যই স্বেচ্ছাসেবক হবো? তাদের জন্য উত্তর হতে পারে একজন স্বেচ্ছাসেবক তার কাজের মাধ্যমে নিজের নেতৃত্বগুণ এবং মানুষের সাথে কমিউনিকেশনের জায়গাটা উন্নত করতে পারে। আবার বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরীর ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া থাকে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা যা নতুনদের জন্য চাকরি পাওয়ার একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। সেক্ষেত্রে যে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করলে নেতৃত্বের গুণ, ধৈর্য্য, উদারতা ও পরিশ্রমের মানসিকতা সহ নানা ধরনের অভিজ্ঞতার সঞ্চার হবে এবং চাকরির বাজারের পথটাও অনেকাংশে সহজ হবে।

সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা
সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা

সব ধর্মের দৃষ্টি কোণ থেকেও জীবের প্রতি সেবা কে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয়েছে যা নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। এ জন্য অসহায়-দুস্থ, দরিদ্র মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য, এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করাও প্রতিটি মানবের দায়িত্ব। আপনাকে পুরো সমাজের দায়িত্ব নেওয়ার দরকার নেই, সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তঃত দু- একজনের হাতটা ধরতে চেষ্টা করুন, তার অসহায়ত্বের ছায়া কে আলোকিত করার উদ্যেগ নিন। অনেকই ভাবে যে, এত মানুষ থাকতে আমাকেই কেন করতে হবে এই কাজ। ঠিক আছে, আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনার প্রিয় আর পরিচিত একটি কথা-
‘আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে’ হ্যাঁ, আমাকে, আপনাকেই জেগে উঠতে হবে কারণ আমি-আপনিও এই সমাজেরই অংশ। আপনার, আমার থেকেই চিন্তা করতে হবে সমাজের কল্যাণের। আর আপনার, আমার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মান।
মানবসেবার জন্য অনেক অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় শুধু বিশুদ্ধ ও উদার একটি মনের। অসহায়,অভাগা মানুষের প্রতি ভালোবাসার মন নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই কেবল সমাজে শান্তি আসবে। আজ থেকে শপথ নিয়ে সমাজে তিন জন ব্যক্তি যথা আমি, আপনি এবং সে যদি স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রমে অংশ নেই তাহলেই সমাজের অসহায়, অন্ধকার মুখগুলোতে আলোর শিখা জ্বলে উঠবে আর সমাজ হবে অনাবিল সুখের কেন্দ্র।

দেলোয়ার হোসেন রনি
প্রতিষ্ঠাতা, নবছায়া ফাউন্ডেশন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা

আপডেট সময় : ০৬:৫৫:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

আত্মত্যাগ,সাহায্য- সহযোগিতার দ্বারা মনুষ্যত্বের বহিঃপ্রকাশ ও পারিশ্রমিকহীন সেবার মানসিকতার মাধ্যমে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মে কোন সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে অথবা ব্যক্তিগতভাবে কাজ করাই হলো স্বেচ্ছাসেবা। এটি হওয়া চাই স্বপ্রণোদিত। “আপন নাক কেটে পরের যাত্রা নষ্ট করা” এই প্রবাদের সাথেও অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাথমিক মিল খুঁজে বেড়ায় যদিও সত্যিকার অর্থে এর অর্থ ভিন্ন।

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ‘নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সেরা উপায় হলো অন্যের সেবায় নিজেকে হারিয়ে দেয়া।’ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে জড়িত হাজার হাজার ব্যক্তি শুধুমাত্র অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে বিনে পয়সায় কাজ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন যা একান্তই নিজের নিরেট আত্মতৃপ্তি এবং আনন্দের জন্য।

স্বেচ্ছাসেবাতে এমন এক ধরণের অনুভূতি আর আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় যা একমাত্র এই কাজে সংশ্লিষ্ট মানুষরাই অনুধাবন করতে পারে। কেউ কাউকে সাহায্য করার পর সাহায্যপ্রাপ্ত অসহায় মুখ গুলো যে ধন্যবাদ জানায় সেটা একান্ত মনের ভেতর থেকে আসে আর এই নির্ভেজাল ভালোবাসা ই স্বেচ্ছাসেবকদের জীবনের সবচেয়ে পরম আত্মতৃপ্তি।

স্বেচ্ছাসেবকরা সমাজে সহযোগিতার বীজ বুনে শুধু সমাজকেই সুখী করেনা বরং নিজেও লাভ করে অনাবিল সুখ। যে সুখ অর্থ দিয়ে ক্রয় করা অসম্ভব। তাই নিজের আত্মাকে সুখী করে তোলার একটা উত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবা। আপনার আশপাশের অনাথ, অসহায় ও দরিদ্র নারী-পুরুষ-শিশু আছে যাদের মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারে শুধু আপনার সামান্য সহযোগিতায়, আর সেই হাসিমাখা মুখ গুলো ই আপনার অন্তরকে করবে পুলকিত। আপনি হৃদয়ে অনুভব করবেন এক অজানা আনন্দ ।

শুধু অর্থ-সম্পদ দিয়েই স্বেচ্ছাসেবা হয়না। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বিপদে পরা, অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়ানো হচ্ছে আসল স্বেচ্ছাসেবা। আর হ্যা, শুধু মানুষই নয় আমাদের চারপাশের পশু-পাখি, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজের অন্যান্য সকল বিষয়ের প্রতি আমাদের মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে।দেশে অনেক ধরনের সামাজিক সংগঠন আছে যেগুলো কাজ করতে চায় সমাজের কল্যাণে। এর যে কোনো একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, রোগীদের রক্ত দান, দরিদ্রদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা আদায়ের ব্যবস্থা করণ, পথ শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ,পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, বৃক্ষরোপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা সেবায় কাজ করা যায়।

অনেকের মনে আবার প্রশ্নও থাকে যে, শুধু কি আত্মতৃপ্তির জন্যই স্বেচ্ছাসেবক হবো? তাদের জন্য উত্তর হতে পারে একজন স্বেচ্ছাসেবক তার কাজের মাধ্যমে নিজের নেতৃত্বগুণ এবং মানুষের সাথে কমিউনিকেশনের জায়গাটা উন্নত করতে পারে। আবার বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরীর ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া থাকে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা যা নতুনদের জন্য চাকরি পাওয়ার একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। সেক্ষেত্রে যে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করলে নেতৃত্বের গুণ, ধৈর্য্য, উদারতা ও পরিশ্রমের মানসিকতা সহ নানা ধরনের অভিজ্ঞতার সঞ্চার হবে এবং চাকরির বাজারের পথটাও অনেকাংশে সহজ হবে।

সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা
সমাজ বদলাবে স্বেচ্ছাসেবা

সব ধর্মের দৃষ্টি কোণ থেকেও জীবের প্রতি সেবা কে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয়েছে যা নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। এ জন্য অসহায়-দুস্থ, দরিদ্র মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য, এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করাও প্রতিটি মানবের দায়িত্ব। আপনাকে পুরো সমাজের দায়িত্ব নেওয়ার দরকার নেই, সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তঃত দু- একজনের হাতটা ধরতে চেষ্টা করুন, তার অসহায়ত্বের ছায়া কে আলোকিত করার উদ্যেগ নিন। অনেকই ভাবে যে, এত মানুষ থাকতে আমাকেই কেন করতে হবে এই কাজ। ঠিক আছে, আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনার প্রিয় আর পরিচিত একটি কথা-
‘আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে’ হ্যাঁ, আমাকে, আপনাকেই জেগে উঠতে হবে কারণ আমি-আপনিও এই সমাজেরই অংশ। আপনার, আমার থেকেই চিন্তা করতে হবে সমাজের কল্যাণের। আর আপনার, আমার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মান।
মানবসেবার জন্য অনেক অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় শুধু বিশুদ্ধ ও উদার একটি মনের। অসহায়,অভাগা মানুষের প্রতি ভালোবাসার মন নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই কেবল সমাজে শান্তি আসবে। আজ থেকে শপথ নিয়ে সমাজে তিন জন ব্যক্তি যথা আমি, আপনি এবং সে যদি স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রমে অংশ নেই তাহলেই সমাজের অসহায়, অন্ধকার মুখগুলোতে আলোর শিখা জ্বলে উঠবে আর সমাজ হবে অনাবিল সুখের কেন্দ্র।

দেলোয়ার হোসেন রনি
প্রতিষ্ঠাতা, নবছায়া ফাউন্ডেশন